IQNA

ধর্মান্তর যাত্রায় মার্কিন সাংবাদিক সুমাইয়া মিহানের ইসলামের প্রতি ভালবাসার গল্প

14:03 - September 28, 2018
সংবাদ: 2606833
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নবী মুহাম্মদ (সঃ) আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার নিকট এভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছেন- ‘হে আমাদের প্রতিপালক, পার্থিব জীবনে আমাদেরকে উত্তম রিজিক দান করুন এবং পরকালেও আমাদের জন্য উত্তম ব্যবস্থা করুন। আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।’- সহি আল- বুখারী।

ধর্মান্তর যাত্রায় মার্কিন সাংবাদিক সুমাইয়া মিহানের ইসলামের প্রতি ভালবাসার গল্প

 
বার্তা সংস্থা ইকনা: অভ্যাস শব্দটির অর্থ করলে দাঁড়ায়- ‘এমন একটি কাজ যা প্রত্যেক দিন কোনো মানুষ করে থাকে যা ত্যাগ করা কঠিন হয়ে যায়।’

সুতরাং এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম আমাদের জীবনে আমরা যা কিছু করি তা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়।

আপনি হয়ত দামী পোশাক পরিধান করতে পছন্দ করেন বা প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে আপনার প্রিয় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যেতে পছন্দ করেন। আপনি যাই করুন না কেন তা যদি নিয়মিতভাবে করা হয়ে থাকে তবে তা আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে।

একজন নও মুসলিমের জন্যও এ বিষয়টি সত্য। আপনি একজন নও মুসলিম হিসেবে ইসলামের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র মাত্র। তাই যতটা সম্ভব আপনার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ইসলামী জ্ঞান আহরণ করুন।

আপনি যখন এভাবে নিয়মিত ইসলাম চর্চা করা শুরু করবেন তখন দেখবেন আপনার পুরনো বিশ্বাসের অনেক কিছুই আপনি ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছেন এবং একই সাথে আপনার নতুন বিশ্বাসে অভ্যস্ত হতে পেরেছেন।

পোশাক

আপনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে যেভাবে পোশাক পরিধান করতে অভ্যস্ত হয়েছিলেন প্রথমেই আপনাকে তা পরিবর্তন করতে হবে।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার পত্নী ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’-(আয়াত ৩৩:৫৯)।

আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরে ধীরে ধীরে শালীন পোশাক পরিধান করতে অভ্যস্ত হই। আমি এমনকি হিজাব পরিধান কার শুরু করি। প্রথম প্রথম আমার হিজাব এবং শালীন পোশাকের জন্য আমি আমার কমিউনিটিতে অনেক ভৎসনার মুখোমুখি হই যা আমার চোখে অশ্রু এনে দিত।

শালীন পোশাক শুধুমাত্র একজন নারীকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় না, বরং এর মাধ্যমে বিপরীত লিঙ্গের মানুষদের নিকট থেকে সম্মান পাওয়া যায়। মুসলিম হওয়ার পূর্বে আমি মিনি-স্কার্ট পরিধান করতাম এবং আমি সে সময় খেয়াল করতাম যে, শুধুমাত্র পুরুষরাই নয় বরং অনেক নারীও আমার দিকে যৌন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত।

আর এখন ইসলামী পোশাক পরিধান করার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে আমি অনুধাবন করেছি যে, আশেপাশের মানুষজন আমার দিকে সম্মানের দৃষ্টিতে তাকায়। আর আপনাকে এটিও মনে রাখতে হবে- ইসলামে পুরুষদের জন্যও শালীন পোশাক পরিধান কারার নির্দেশ রয়েছে।

নবী মুহাম্মদ(সাঃ) বলেন- ‘আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য দুটি জিনিস পরিধান করা নিষিদ্ধ আর তা হচ্ছে স্বর্ণ এবং রেশমি কাপড় এবং তা নারীদের জন্য অনুমোদিত।’ (ইবনে মাজহা-৩৬৪০)

নম্র আচরণ

ইসলাম ধর্ম আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রেই নম্র আচরণ করার নির্দেশ দেয়। পবিত্র কুরআন এবং রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহতে নম্র আচরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইসলাম ধর্ম খাদ্য গ্রহণের আদব, ঘুমানোর আদব, এমনকি হাঁচি দেয়ার আদব পর্যন্ত শেখায়। একজন নও মুসলিম হিসেবে প্রথমে এটি হয়ত বেখাপ্পা লাগতে পারে তবে মনে রাখুন একটি ছোট পদক্ষেপ আপনাকে বড় কিছু অর্জন করতে সাহস যোগাবে।

অনেক নও মুসলিম ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন আদব-কায়দার সাথে তাল মেলাতে প্রথম প্রথম হোঁচট খান। আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদেরকে হৃদয় শান্ত হওয়ার মত উপদেশ দিয়ে বলেন- ‘ধর্ম খুবই সহজ একটি বিষয় এবং যে কেউ ধর্মকে নিজের জন্য কষ্টকর মনে করবে, সে আর সামনের দিকে এগোতে পারবে না। সুতরাং তুমি শুরুতেই সবকিছু একসাথে কর না, বরং শুদ্ধতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে চেষ্টা করতে থাক এবং প্রশান্তি দায়ক পুরস্কারের সু-সংবাদ গ্রহণ কর।’ (সহি আল-বুখারী)।

একজন মুসলিম হিসেবে প্রথম বছরটি আমার জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। কারণ সেসময় আমি অগণিত ভুল করতে থাকি। আর সময়ের সাথে সাথে আমি চর্চা করা বাড়িয়ে দিই এবং আমি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পরে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চেয়ে চোখের অশ্রু ঝরাতে শুরু করি। সময়ের সাথে সাথে আমি ইসলামী নিয়মনীতিগুলোর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাই।

খাদ্যাভ্যাস

ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরে একজন নও মুসলিম সারা জীবন ধরে গড়ে তোলা খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ করতে হিমশিম খান। যারা সাধারণত পারিবারিক এবং সাংস্কৃতিক সূত্রে খাদ্যাভ্যাস পেয়ে থাকেন তাদের জন্য এটি আরো বেশি কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

পবিত্র কুরআন এবং নবী (সাঃ) এর হাদিসগুলোতে মুসলিমদের জন্য উত্তম খাদ্যাভ্যাসের কথা বলা হয়েছে।

আমি যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি আমার সামনে নতুন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার এক কঠিন দিক এসে দাঁড়ায় আর তা হচ্ছে শুকরের মাংস খাওয়া ত্যাগ করা। একজন নও মুসলিম হিসেবে আমি শুরু থেকেই শুকরের মাংস খাওয়া ত্যাগ করি, এমনকি আমি যখন আমার মায়ের সাথে বেড়াতে যাই তখনও আমি এটা গ্রহণ করি নাই।

এর ফলে পরিবারের অনেকের সাথে আমার মনোমালিন্য হয়। তারা এটিকে নিছক একটি খাদ্য হিসেবে দেখে। তবে আমার জন্য এটি নিছক কোনো খাদ্য নয় এটি একটি হারাম বস্তু।

অভ্যাস আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনি যখন কোনো কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন তখন আপনি নিজের অজান্তেই সেই কাজটি করতে থাকবেন। সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই ভালো অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করতে হবে।

এটি পুরোপুরিই আপনার উপর নির্ভর করে- আপনি কি একজন মুসলিম হিসেবে আপনার চরিত্রের ক্ষতিকর দিকগুলো ত্যাগ করবেন নাকি ইসলামের বিপরীতে চলবেন।

আপনি যত বেশি ইসলাম সম্পর্কে জানবেন ততই আপনি আপনার পুরনো অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে সক্ষম হবেন এবং একই সাথে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন যা আপনাকে আপনার নতুন বিশ্বাসকে আরো বেশি করে উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে।

সূত্রঃ ২২ বছর পূর্বে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় বসবাসরত সুমাইয়া মিহান নামের একজন নারী সাংবাদিকের কলাম থেকে।

captcha