IQNA

হযরত খাদিজা কোবরা (সা.) সকল নারী জাতির আদর্শ

19:31 - June 16, 2016
সংবাদ: 2601009
১৪৪০ চন্দ্র-বছর আগে ১০ই রমজান, হিজরতের তিন বছর আগে ইন্তিকাল করেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদের(সা.) প্রথম স্ত্রী উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ (সালামুল্লাহি আলাইহা)।মানবজাতির মধ্যে চার শ্রেষ্ঠ নারীর মধ্যে অন্যতম হলেন এই মহীয়সী নারী। অন্য তিনজন হলেন নিজ কন্যা হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.) যিনি সব যুগের নারী জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ, হযরত মরিয়ম (সা.), ফেরাউনের স্ত্রী তথা মুসার (আ.) মাতৃতুল্য লালনকারী হযরত আসিয়া (সা.)।
হযরত খাদিজা কোবরা (সা.) সকল নারী জাতির আদর্শ


উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদিজা (সা.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মুসলমান। (যদিও পুরুষদের মধ্যে ঐ একই সময়ে আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী-আ. দশ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন বলে তাঁকেও প্রথম মুসলমান ধরা হয়।) বিশ্বনবী (সা.)'র পেছনে সর্বপ্রথম যে দুই জন জামায়াতে নামাজ আদায় করেছেন তারা হলেন উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদিজা (সা.)ও হযরত আলী(আ.)। খাদিজা (সা.) মহান আল্লাহর এতটা নৈকট্য লাভ করেছিলেন যে যখন হযরত জিবরাইল (আ.) ওহী নিয়ে বিশ্বনবী (সা.)'র কাছে নাজেল হতেন তখন তিনি প্রথমে মহান আল্লাহর সালাম পৌঁছে দিতেন এই মহীয়সী নারীর কাছে।

মহানবী (সা.)'র সঙ্গে বিবাহিত জীবনের ২৫ বছর কাটিয়েছেন মহীয়সী নারী হযরত খাদিজা(সা.)। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন বিশ্বনবী (সা.) অন্য কোনো স্ত্রী গ্রহণ করেননি।

রাসূল (সা.)-কে বিয়ের আগেও হযরত খাদিজা(সা.) ছিলেন একত্ববাদী ও হযরত ইব্রাহিম (আ.)'র ধর্মের অনুসারী এবং আরব জাতির মধ্যে সবচেয়ে ধনী মহিলা। হাজার হাজার উট তাঁর মালিকানাধীন বাণিজ্য-সম্ভার দেশ থেকে দেশে বহন করত বলে ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে। বিশ্বনবী (সা.)'র সঙ্গে বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ৪০ বছর (এ সময় তাঁর বয়স আরো কম ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন)।

বিশ্বনবী (সা.)'র সঙ্গে বিয়ের ১৫ বছর পর যখন মহান আল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর স্বামীকে নবুওত দান করেন তখন থেকেই উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদিজা (সা.) নিজের সব সম্পদ বিশ্বজনীন ধর্ম ইসলামের প্রচার-প্রসার ও নির্যাতিত নও-মুসলিমদের ভরণ-পোষণের কাজে ব্যয় করতে থাকেন এবং ইসলামের পেছনেই ব্যয় হয়ে যায় তাঁর সমস্ত সম্পদ। ফলে তাঁর ইন্তিকালের পর ইয়াতিম কন্যা ফাতিমা (সা.) একটি মুদ্রা পরিমাণ সম্পদও উত্তরাধিকারসূত্রে (মায়ের কাছ থেকে) লাভ করেননি।

বিশ্বনবী (সা)-কে বিয়ে করার কারণে মক্কার কাফির সম্প্রদায়ের মহিলারা বিবি খাদিজাকে বয়কট করেছিল। ফাতিমা (সা)'র জন্মের প্রাক্কালে কাফির সম্প্রদায়ের অভিজাত মহিলারা তাঁর সেবার জন্য কোনো নারীকে পাঠায়নি। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ ও কুদরতের ছায়ায় তিনি ফাতিমা (সা.)-কে প্রসবের সময় দেখতে পান যে তাঁর সেবা করার জন্য বেহেশত থেকে এসেছেন ইসহাকের (আ) মা বিবি সারা, ঈসার (আ) মা বিবি মারইয়াম, ফিরআউনের স্ত্রী আছিয়া এবং হযরত মূসার বোন উম্মে কুলসুম। এ প্রসঙ্গে উম্মুল মু’মিনিন হযরত খাদিজা (সা. আ) বলেছেন, ‘ফাতিমার জন্মগ্রহণের সময় সাহায্য করার জন্য আমি কুরাইশ নারীদের ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তারা এ বলে প্রত্যাখ্যান করল যে, আমি মুহাম্মাদকে বিয়ে করেছি। আমি কিছুক্ষণের জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ দেখলাম চারজন উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় দীর্ঘকায়া বিশিষ্ট নারী আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমাকে আতংকিত দেখে তাঁরা বললেন : হে খাদীজা! ভয় পাবেন না। আমি হলাম ইসহাকের মা সারা (হযরত ইব্রাহিম আ.'র স্ত্রী), আর অপর তিনজন হলেন ঈসার মা মারইয়াম, ফিরআউনের স্ত্রী আছিয়া এবং মূসার বোন উম্মে কুলসুম। আল্লাহ আমাদের পাঠিয়েছেন আপনাকে সাহায্য করতে। এ বলে সেই জ্যোতির্ময় নারীরা আমার চারপাশ ঘিরে বসলেন। আমার মেয়ে ফাতিমা জন্মগ্রহণ করা পর্যন্ত তাঁরা আমার সেবা করলেন।’ কন্যা ফাতিমা (সা. আ.) যখন হযরত খাদিজা (সা. আ)’র গর্ভে ছিলেন তখন তাঁর সঙ্গে মা খাদিজা কথা বলেছেন বলে বর্ণনা রয়েছে।

ইসলামের এই মহীয়সী নারী ৬১৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ই রমজান ৬৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুতে রাসূল (সাঃ) প্রচণ্ড ব্যথা পান। পরবর্তীতে খাদিজার কথা মনে করে তিনি বলতেন, আল্লাহপাক খাদিজার চেয়ে উত্তম কোন স্ত্রী আমাকে দেন নি। কারণ যেদিন সে আমার উপর ঈমান এনেছিল সেদিন অন্যরা আমাকে অস্বীকার করেছিল। যখন সে তাঁর সমস্ত ধন-সম্পদ আমাকে উপহার দিয়েছিল, তখন অন্যরা আমাকে বঞ্চিত করেছিল।

captcha