IQNA

হামাস নয় বরং ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাঈলই প্রকৃত সন্ত্রাসবাদী ও সন্ত্রাসবাদ লালনকারী !

14:49 - November 21, 2021
সংবাদ: 3471011
তেহরান (ইকনা): ব্রিটেন , ইউরোপীয় ইউনিয়ন , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , কানাডা , অস্ট্রেলিয়া ও ইসরাইল গং হচ্ছে প্রকৃত সন্ত্রাসবাদী এবং সন্ত্রাসবাদের হোতা ও জনক জননী । কুখ্যাত দায়েশ বা আইসিসের জনক জননী হচ্ছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন যা এমনকি ট্রাম্পের কণ্ঠেও ধ্বনিত হয়েছে ।

এ ছাড়া পশ্চিম এশিয়া ( মধ্য প্রাচ্য ) , আফ্রিকা , এশিয়ায় আল কায়দা , জাবহাতুন্নুসরা , আহরারুশ শাম , তালিবান , বোকো হারাম , আশ শাবাব ইত্যাদির মতো জঘন্য সব সালাফী ওয়াহ্হাবী তাকফীরী সন্ত্রাসবাদী নরঘাতক নরখাদক ( নিহত সিরীয় সৈন্যের হৃদপিণ্ড চিবানো ইত্যাদি দুষ্কর্ম ও যুদ্ধাপরাধকারী ) সংগঠন সমূহের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ব্রিটেন , ফ্রান্স , ইসরাইল এবং তাদের আঞ্চলিক বশংবদ তল্পীবাহক ধামাধরা সৌদি আরব , আরব আমিরাত , কাতার , মিসর , পাকিস্তান ও তুরস্কের মতো দেশগুলো । এ ছাড়া পাশ্চাত্য পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পেঝক , মুজাহিদীনে খালক ( মুনাফিকীনে খাল্ক বলা উচিত ) , কোমোলেহ , আল আহওয়াযিয়া ইত্যাদির  মতো বিভিন্ন ধরণের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও সংগঠন সমূহকেও পৃষ্ঠ পোষণা , সাহায্য ও সহযোগিতা দান করে আসছে বহুদিন যাবৎ ।

 

গত ১২১ বছরে বিভিন্ন দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক সরকার সমূহের পতন ঘটিয়েছে পাশ্চাত্য বিশেষ করে এই ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । সারা বিশ্ব জুড়ে বিগত তিন - চার শতাব্দী ধরে ইউরোপীয়রা বিশেষ করে ব্রিটেন , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ( মার্কিন শ্বেতাঙ্গরা সবাই ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ) ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ আগ্রাসন চালিয়ে ও যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে কোটি কোটি নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে আফ্রিকা , এশিয়া , অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর - দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে  এবং তা এখনও অব্যাহত আছে ও থাকবে ! আর গত বিংশ শতকের শুরুতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স বেলফার ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তীন ভূখণ্ড জবর দখল করে অবৈধ ইহুদীবাদী ইসরাঈল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার পটভূমি তৈরি করে । এরপরে ১৯৪৮ সালে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে ইসরাঈল নামক অবৈধ সন্ত্রাসবাদী মেকি কৃত্রিম চরম বর্ণবাদী আগ্রাসী রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয় । আর ইউরোপ ও তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নও এ যালেম আগ্রাসী রাষ্ট্রটিকে তাৎক্ষণিক স্বীকৃতি দিয়েছিল ।

 

সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ও তৎপরতার মধ্য দিয়েই ইসরাঈলের জন্ম ও বিকাশ । ফিলিস্তীনের মূল অধিবাসীদেরকে মেরে কেটে হত্যা ও উচ্ছেদ করে এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাঈল । দেইর ইয়াসীনের গণহত্যা ইসরাইলের বহু অগণিত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও কর্মকাণ্ডের একটি নমুনা মাত্র । এ ছাড়া ১৯৮২ সালে ইসরাইল দক্ষিণ লেবানন ও বৈরুত জবরদখল করলে এ শহরে ( বৈরুত) অবস্থিত সাব্রা ও শাতিলা ফিলিস্তীনী শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলী সেনাবাহিনীর নির্দেশে সন্ত্রাসী ফ্যালাঞ্জিস্ট মিলিশিয়ারা দখলদার ইসরাঈলী সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ও তাদের নাকের ডগায় দুই সহস্রাধিক নিরীহ ফিলিস্তীনীকে হত্যা করেছিলো যাদের অধিকাংশই ছিল নারী ও শিশু । এগুলো কি ইসরাঈল কর্তৃক পরিচালিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ নয় ? এগুলো যদি সন্ত্রাসবাদ বলে গণ্য না হয় তাহলে সন্ত্রাসবাদের প্রকৃত স্বরূপ ও হাকীকতটা কী হবে ?

 

 ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড , লুণ্ঠন , ধর্ষণ , হত্যাযজ্ঞ ও আগ্রাসী যুদ্ধ ইত্যাদির মতো জঘন্য ভয়ঙ্কর লোমহর্ষক সব অপরাধের কারণে প্রাণ বাঁচাতে ফিলিস্তীনী অধিবাসীদের অধিকাংশই নিজেদের মাতৃভূমি ফিলিস্তীন ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় । এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে  কয়েকটি আরব - ইসরাঈল যুদ্ধও সংঘটিত হয় । নিজেদের বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ কৃত ও বিতাড়িত এ সব ফিলিস্তীনী নিজেদের মাতৃভূমি উদ্ধারের জন্য ইসরাঈলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করে । হামাস , জিহাদ - ই ইসলামী - ই ফিলিস্তীন এবং অন্য সকল ফিলিস্তীনী প্রতিরোধ সংগঠন মাতৃভূমি মুক্ত ও উদ্ধারের জন্য সংগ্রাম রত হওয়ায় পাশ্চাত্যের কাছে অপরাধী ও সন্ত্রাসী বলে বিবেচিত হচ্ছে । অথচ ব্রিটেন , পশ্চিমা দেশগুলো , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাঈল যদি আগ্রাসন , যুদ্ধ ও সন্ত্রাস চালিয়ে ফিলিস্তীন জবরদখল ও সেখানকার অধিবাসীদেরকে তাদের পৈত্রিক বাসভূমি ও বাস্তুভিটা থেকে বলপূর্বক ও অবৈধভাবে উচ্ছেদ ও বিতাড়িত না করত তাহলে কি ফিলিস্তীনীরা যুদ্ধ ও প্রতিরোধ সংগ্রামে লিপ্ত হত ?!

 

ইসরাইল যে কত বড় নির্লজ্জ বেহায়া অপরাধী ও অবৈধ দখলদার তার প্রমাণ হলো যে প্রায়ই সে এখনো ফিলিস্তীনীদেরকে তাদের পৈত্রিক বসত বাড়ী ও বাস্তুভিটা থেকে বলপূর্বক উচ্ছেদ করে তাদের বাড়ী ঘর বুলডযার দিয়ে ভেঙে চুরমার করে দেয় , তাদের ক্ষেতি জমিন জোর করে কেড়ে নেয় ও অধিগ্রহণ করে এবং সে সব অধিকৃত ভূমি ও জমিতে বহিরাগত ইহুদীদের জন্য বসতি ও বাড়ীঘর নির্মাণ করে । কুখ্যাত মোসাদের মতো ইসরাইলের সন্ত্রাসী গোয়েন্দা সংস্থা ও নেট ওয়ার্ক সমূহ ফিলিস্তীনী , লেবাননী  ও আরবদের বিরুদ্ধে বহু অগণিত সন্ত্রাসী অভিযান ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে ও চালাচ্ছে । ইসরাইলের  গোয়েন্দা সংস্থা ও নেটওয়ার্ক সমূহ ইরানে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষস্থানীয় নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানীদেরকেও হত্যা করেছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ইরাক সরকারের আমন্ত্রিত জেনারেল কাসেম সুলাইমানীকে এবং ইরাক সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গণবাহিনী প্রধান আবূ মাহদী আল - মুহান্দিসকে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে হত্যা করে ।

 

এ সব কিছু উল্লেখ করার পর প্রমাণিত হয়ে যায় যে হামাস ও অন্য কোনো ফিলিস্তীনী মুক্তিকামী সংগঠন নয় বরং ব্রিটেন , ফ্রান্স , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাঈল গংই হচ্ছে প্রকৃত সন্ত্রাসবাদী ও সন্ত্রাসবাদের গডফাদার ।  আর ব্রিটেনের পোষ্য ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্যামাঙ্গিনী পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল সন্ত্রাসবাদী প্রভুদের নির্দেশেই হামাসের বিরুদ্ধে এ ধরণের জঘন্য পদক্ষেপ নিয়েছে যার কোনো বিন্দুমাত্র মূল্য ও দাম নেই । ব্রিটেন কর্তৃক হামাসকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করার এ ঘোষণা আসলে চোরের মার বড় গলার মতোই শোনাচ্ছে । কারণ ঠিক যেমন অপরাধ থেকে বাঁচতে চোর ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা জোরে জোরে চেঁচাতে ও আস্ফালন করতে থাকে ঠিক তেমনি সন্ত্রাসবাদী ব্রিটেন , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল গং সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় হোতা ও ভয়ঙ্কর

 

সন্ত্রাসী হয়েও  গলা হাঁকিয়ে বলছে : হামাসই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও সংগঠন । অতএব তা নিষিদ্ধ !!

রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদীদেরকে দেখতে চাইলে ব্রিটেন , ফ্রান্স , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকেই দেখা উচিত ।

 

ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
৩০ - ৮ - ১৪০০
captcha