IQNA

‘একজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নারী হিসেবে আমি যেভাবে বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি’

12:07 - October 22, 2018
সংবাদ: 2607075
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যখন আমি কারো সাথে প্রথমবারের মত পরিচিত হই তখন সাধারণত আমি ধারণা করতে পারি যে তারা আমার সম্পর্কে কি চিন্তা-ভাবনা করছে। তাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব এবং কৌতূহলী মনে প্রথমেই যে প্রশ্নটা আসে, তাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার উত্তর আমার মনে তৈরি করাই থাকে।

 

বার্তা সংস্থা ইকনা: আর প্রশ্নটি হচ্ছে- ‘আপনি আসলে কোথা থেকে এসেছেন?’

লোকজন কেন আমার ঐতিহ্যগত বিষয়সমূহ নিয়ে কৌতূহলী তা আমি বুঝতে পারি। আমার চোখ জোড়া নীল-বাদামী, আমার ঠোঁট এবং নাক চওড়া। এগুলোর চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমি হিজাব পরিধান করি।

‘আপনি কোথা থেকে এসেছেন?’ অথবা ‘আপনি কোন জাতির অন্তর্ভুক্ত?’ আমি আমার সারা জীবন এই প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হয়েছি।

আমি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে প্রশ্নকারীর কাছে জানতে চাই, ‘আমি কোথা থেকে এসেছি বলে আপনি মনে করেন?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে লোকজন প্রায়শই যেসব দেশের নাম উল্লেখ করে সেগুলো হচ্ছে- মরক্কো, আলজেরিয়া, পাকিস্তান, সোমালিয়া এবং ব্রাজিল।

কিন্তু কেউই কখনো সঠিকভাবে আমার দেশের নাম উল্লেখ করতে পারেনি যে, আমি একজন জ্যামাইকান। হ্যাঁ, আমি কৃষ্ণাঙ্গ এবং আমার দেশ জ্যামাইকা।

প্রশ্নকারী যখন আমার এমন উত্তর শুনতে পায় তখন তারা রীতিমত অবাক হয়ে যান। তারা তখন বলেন, ‘না, আপনি ভুল বলছেন!’ ‘সত্যি?’ ‘ওহ খোদা’ ইত্যাদি।

লোকজন এমন প্রতিক্রিয়া জানায় কারণ তারা বিশ্বাস করতে পারে না যে, জ্যামাইকাতেও মুসলিম থাকতে পারে।

সত্যি বিষয় হচ্ছে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের বিশেষত আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের সাথে ইসলামের একটি যোগসূত্র রয়েছে।

অনেকে হয়ত জানেই না যে, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের পূর্ব পুরুষ ছিলেন পশ্চিম-মধ্য আফ্রিকা থেকে আসা মুসলিম। তবে আমি এটাও স্বীকার করছি যে, ইসলাম আসার পূর্বেও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের নিজস্ব ধর্ম ব্যবস্থা ছিল।

অনেকেই আমার উত্তর শুনে আগ্রহের সাথে আমার পরিবার এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে চায়। তবে এসবের বাহিরে আমাকে একেবারে ভিন্ন কিছু প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয়েছে যা আমাকে একেবারেই হতাশ করে দেয়।

হাস্যকর এবং একই সাথে পীড়াদায়ক যে ব্যাপারটি প্রায়শই ঘটে তা হচ্ছে- আমি একজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম হিসেবে অন্য মুসলিমদের নিকট থেকে হতাশাজনক প্রতি-উত্তর পেয়ে থাকি। এর অবসান হওয়া উচিত, কেননা ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই।

আর প্রধানত এই বর্ণবাদের স্বীকার হন আফ্রিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মুসলিম নারীরা।

মুসলিম সমাজের মধ্যে বিদ্যমান বর্ণবাদ

ব্যক্তিগতভাবে বলতে হয় একসময় আমার সাথে একজন বৃদ্ধ মুসলিম নারীর সাক্ষাত হয়েছিল যিনি আমাকে একজন আরব মুসলিম ভেবে ভুল করেছিলেন। যখন তিনি জানতে পারলেন আমি একজন জ্যামাইকান মুসলিম তখন আমার সাথে আলাপ করার তার সকল আগ্রহ নিমেষেই উবে গেল।

এমনকি আমার সাথে একজন মুসলিম ভাইয়ের পরিচয় হয়েছিল যিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি কখনো আপনাকে আমার পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবো না কারণ আপনি ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে এসেছেন।’ তিনি যা বোঝাতে চেয়েছিলেন তা হচ্ছে- কারণ আমি একজন জ্যামাইকান, আমি একজন কৃষ্ণাঙ্গ।

আমার মত সকল কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম বোন বর্ণ বৈষম্যের স্বীকার হন আমি এমনটি দাবী করছি না। কিন্তু আমি একেবারেই ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি যা অনেকটা এরকম- যখন আমি কোনো মুসলিমের সাথে আলাপচারিতা করতে থাকি তখন আমাদের উভয়েই একে অপরের প্রতি আন্তরিক থাকে আর যখন তারা জানতে পারে আমি একজন জ্যামাইকান মুসলিম তখন সবসময়ই তার উল্টোটা ঘটে থাকে।

আমার মত যেসব কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নারী বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন বা হয়েছেন এখানে আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলবো- ইসলাম একটি সুন্দর ধর্ম। কৃষ্ণাঙ্গরাও অসুন্দর নয়। সকল নারীই সুন্দর। নিজেকে শিক্ষিত করুন, নিজেকে জানুন এতে করে আপনি অন্যদেরকেও শ্রদ্ধা এবং সম্মান সম্পর্কে শিক্ষা দিতে পারবেন।

সূত্রঃ আয়েশা-আশের মর্গান নামক কৃষ্ণাঙ্গ জ্যামাইকান মুসলিম নারীর কলাম থেকে।

 

captcha