IQNA

ঘনিয়ে আসছে বিশ্ব কুদস দিবস: মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর কিসের বার্তা?

23:55 - May 27, 2018
সংবাদ: 2605853
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মজলুম ফিলিস্তিনিদের ফরিয়াদ বিশ্বের কাছে তুলে ধরা এবং শিশু হত্যাকারী দখলদার ইসরাইলের প্রতি সারা বিশ্বের ঘৃণা প্রকাশের দিন অর্থাৎ বিশ্ব কুদস দিবস ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে। প্রতি বছর রমজানের শেষ শুক্রবার বিশ্ব কুদস দিবস পালিত হয়।


বার্তা সংস্থা ইকনা: এ বছর এমন সময় বিশ্ব কুদস দিবস পালিত হতে যাচ্ছে যখন মার্কিন নতুন ষড়যন্ত্রের কারণে ফিলিস্তিন সংকট অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্বেও তেলআবিব থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করার ঘটনা আমেরিকার অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশের সুযোগ এনে দিয়েছে। আমেরিকার এ পদক্ষেপ দখলদার ইসরাইলের সম্প্রসারণকামীতাকে পূর্ণতা দিয়েছে যা কিনা মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনবে।

ইসরাইল ৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে জবরদখল করে রেখেছে এবং ১৯৬৭ সালে তারা বায়তুল মোকাদ্দাস দখল করে নেয়। এ দীর্ঘ সময়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে অথবা অধিকৃত এলাকায় তারা বৈষম্য শিকার ও হুমকির সম্মুখীন। অন্যদিকে বছরের পর বছর ধরে ইসরাইল গাজা অবরুদ্ধ করে রেখে সেখানে এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় বায়তুল মোকাদ্দাসে দূতাবাস স্থানান্তরের মাধ্যমে আমেরিকা ফিলিস্তিনিদেরকে এ বার্তাই পৌঁছে দিয়েছে যে, ইসরাইলের স্থিতিশীলতা ও দখলদারিত্বের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন রয়েছে।

বায়তুল মোকাদ্দাস ইসলাম ও ফিলিস্তিনিদের আসল পরিচিতি। এটি মুসলমানদের প্রথম কেবলা হওয়ার কারণে শুধু ফিলিস্তিন নয় বরং সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে এর ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। অতীত ঘটনাবলীর দিকে তাকালে দেখা যাবে দখলদার ইসরাইল আমেরিকার সমর্থনে বায়তুল মোকাদ্দাসকে পুরোপুরি দখলে নেয়ার জন্য নানা ষড়যন্ত্র ও কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় অধিবাসীদেরকে বের করে দেয়া, তাদের জায়গাজমি দখল করা, বায়তুল মোকাদ্দাসের জনসংখ্যার কাঠামোয় পরিবর্তন আনার জন্য সেখানে ইহুদি বসতি নির্মাণ করা, ইসলামের স্মৃতিচিহ্নগুলো ধ্বংস করে দেয়া, উগ্র ইহুদিদের অনুপ্রবেশের মাধ্যমের আল আকসা মসজিদের অবমাননা করা প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়। মুসলমানদের সবচেয়ে তিনটি পবিত্র স্থানের মধ্যে বায়তুল মোকাদ্দাস হচ্ছে অন্যতম। অথচ আমেরিকা দূতাবাস স্থানান্তরের মাধ্যমে শুধু যে মুসলমানদের অবমাননা করেছে তাই নয় একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রীতি ও জাতিসংঘের ২৩৩৪ ও ৪৭৮ নম্বর প্রস্তাবও লঙ্ঘন করেছে।

দূতাবাস স্থানান্তরের মাধ্যমে আমেরিকা দু'টি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে। প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে বৃহৎ মধ্যপ্রাচ্য গঠনের যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করা। যদিও ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পরাজয় এবং ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন অচলাবস্থার সম্মুখীন হওয়ায় আমেরিকার ওই পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। আর দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, লেবানন ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামীদেরকে নির্মূল করা যাতে দখলদার ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

প্রকৃতপক্ষে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের প্রধান শরীক হচ্ছে আমেরিকা। বর্তমানে আমেরিকা নতুন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের আসল পরিচয় অর্থাৎ বায়তুল মোকাদ্দাসের পরিচিতি ধ্বংসের চেষ্টা করছে যাতে ফিলিস্তিনিদের আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করা সব মুসলমানের দায়িত্ব। তিনি বলেছেন, এটা মনে করার কোনা কারণ নেই যে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলা অযথা বরং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ সংগ্রাম সফল হবে। পার্সটুডে

captcha